Header Ads

জাতির ঘাতক শেখ মুজিবুর রহমান

জাতির ঘাতক শেখ মুজিবুর রহমান


৭১ পূর্ববর্তী সময় ও ৭৫ পরবর্তী সময়গুলোতে শেখ মুজিবকে জাতির জনক বানিয়ে নবী-ওলি পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হলেও ৭২ থেকে ৭৫ পর্যন্ত পুরো ইতিহাস একটি প্রজন্ম থেকে গোপন করে দেয়া হয়েছে। কর্নেল ফারুক কেন শেখ মুজিবকে ঝাড়ে-বংশে শেষ করে দিল, তাঁর জানাজায় মানুষ কেন এলো না—এই ইতিহাস জানা খুব জরুরি। একটা জাতিকে ধ্বংস করে দেয়ার জন্য যা যা করা প্রয়োজন, ৭২ থেকে ৭৫ পর্যন্ত শেখ মুজিব তা করেছিলেন। শেখ সাহেব একজন ভাল নেতা ছিলেন বটে, কিন্তু কখনোই ভাল শাসক ছিলেন না; ক্ষমতার লোভ সব সময় একই রকম ছিল। একাত্তর পূর্ববর্তী সময় বড় বড় গলায় বক্তব্য দিয়ে জাতিকে উস্কে দিলেও তলে তলে পাকিস্তানিদের সাথে আঁতাত করতেন ক্ষমতার জন্য। এই কারণে তাঁর রাজনৈতিক অভিভাবক মাওলানা ভাসানী তাকে "পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার লোভ ত্যাগ করে জনতার কাতারে নেমে আসার আহ্বান জানাতেন।" শেখ সাহেব কখনোই স্বাধীনতা কামনা করেননি; স্বাধীনতার ঘোষণা দান ও মুক্তিযুদ্ধ এড়াতেই তিনি ৭১-এর ২৬ মার্চ ভয়াল রাতে পাক হানাদার বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে নিজেকে পাকিস্তানিদের কাছে "দেশদ্রোহী নয়" এটার প্রমাণ দিয়েছিলেন।


ইতিহাসের সেসব কালো অধ্যায় জানতে আমাদের কাছে সংরক্ষিত পিডিএফ বইগুলো ফ্রিতে পড়তে পারেন:

~ মুক্তিযুদ্ধের অজানা ইতিহাস

~ ডকুমেন্টারি


১৯৭২ থেকে ১৯৭৫: শেখ মুজিবের শাসনামল


১৯৭১ সালের স্বাধীনতা লাভের পর মুজিব যখন বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করলেন, তখন পুরো দেশ ছিল বিধ্বস্ত। তথাকথিত ভারতীয় মিত্রবাহিনী সদ্য ভূমিষ্ট দেশ থেকে লুটপাট চালিয়ে ভারতে নিয়ে যাচ্ছিল, অন্যদিকে আ'লীগের নেতাকর্মীরাও বসে ছিল না; সংখ্যালঘু এবং বিহারীদের সম্পদ লুটপাট বিদ্যমান ছিল। এমতাবস্থায় শেখ মুজিব এসে প্রেসিডেন্ট হওয়ার কথা থাকলেও অতিমাত্রায় ক্ষমতালোভী শেখ মুজিব জানতেন যে সকল নির্বাহী ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর হাতে, তাই তিনি এয়ারপোর্ট থেকে ফেরার সময় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদকে কানে কানে বলেন, "আমি কিন্তু প্রেসিডেন্ট হব না, প্রধানমন্ত্রী হতে চাই।"


পড়ুন তাজউদ্দীনের মেয়ে শারমিন আহমেদের বই "নেতা ও পিতা"।


নেতা হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে শেখ মুজিবের কোনো কৃতিত্ব না থাকলেও রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা তাজউদ্দীন আহমদকে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরিয়ে তিনি নিজেই বসে যান, মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রেসিডেন্ট সৈয়দ নজরুল ইসলামকে সরিয়ে তাঁর জায়গাতে বিচারপতি আবু সায়িদ চৌধুরীকে বসান। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে যারা বাংলাদেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায় ছিলেন, তাঁদের সমূলে উৎখাত করে নিজের ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার পর বেরিয়ে আসে তাঁর ভয়াল রূপ।


১৯৭৩ এর নির্বাচন


এই নির্বাচনে আ'লীগের জেতার সকল চান্স থাকা সত্ত্বেও শেখ মুজিব বিরোধী দলকে একটা আসনও ছাড় দিতে রাজি ছিলেন না; কোনো মতে সহ্য করতেন না বিরোধী দল ও মত। শেখ হাসিনা ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৩ সালের নির্বাচনে যে কলঙ্কজনক অধ্যায়ের সূচনা করেন, তা মূলত তাঁর বাবার কাছ থেকে ওয়ারিশ সূত্রে পাওয়া। স্বাধীনতা লাভের পর বাংলাদেশের প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৭৩ সালের ৮ মার্চ। সেই নির্বাচনে ইতিহাসের প্রথম ভোট চুরির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন শেখ মুজিব। পুরো বিশ্ববাসীকে অবাক করে দিয়ে হেলিকপ্টারে করে ব্যালট বাক্সভর্তি ভোট পাঠিয়ে কুমিল্লার খন্দকার মোশতাককে জিতিয়ে আনেন। অন্যান্য আসনগুলোতেও রাতে ভোট, কেন্দ্র দখল, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে অপহরণ, জাল ভোট দেয়াসহ নির্বাচন কেন্দ্রিক সকল চুরি এবং অপকর্মের সূচনা করেছিলেন শেখ মুজিব ১৯৭৩ সনে। একটি জাতির প্রথম মত প্রকাশ ও ভোটার অধিকার হরণ করেন শেখ মুজিব।


ইতিহাসের সেসব প্রামাণ্য দলিল দেখতে পারেন নিচের লিংকগুলোতে:

~ বই

~ পত্রিকা

~ ডকুমেন্টারি


গণপরিষদ সদস্য পদ বাতিল আদেশ এবং জাতীয় রক্ষীবাহিনী আইন


শেখ মুজিব তাঁর ক্ষমতা একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণের জন্য ভয়ংকর এবং অদ্ভুত এক আইন, গণপরিষদ সদস্য পদ বাতিল আদেশ, পাস করেন। জনগণের দ্বারা নির্বাচিত প্রতিনিধিদের ওপর এমন আইন অদ্যাবধি ইতিহাসে বিরল। যার ক্ষমতাবলে তিনি যাকে যখন ইচ্ছে বরখাস্ত করার ক্ষমতা নিয়ে নেন। শেখ মুজিবের বর্বর শাসনামলে যে সব নেতা, মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী সৎ ও স্পষ্টবাদী ছিলেন, তাঁদের তিনি গণহারে বরখাস্ত করেন। আইনটি পাস হওয়ার মাত্র ৩ মাসের মধ্যে তিনি জেনারেল ওসমানীসহ ৪৬ জন এমপিকে কোনো কারণ ছাড়াই বরখাস্ত করেন। একের পর এক এহেন অদ্ভুত আইন ও ক্ষমতার অপব্যবহারে দেশপ্রেমিক নেতারা ফুঁসে উঠলে শেখ মুজিব জরুরি অবস্থার ভয় দেখিয়ে বলেন, "আমি চাইলে ৩ বছরের জন্য জরুরি অবস্থা জারি করতে পারি, কোনো কথা চলবে না, কোনো গণতন্ত্র চলবে না, কোনো সমালোচনা সহ্য করা হবে না।" বিখ্যাত ইতিহাসবিদ ব্যারিস্টার আবদুল হালিম তাঁর বইতে মুজিব সম্পর্কে লিখেছেন, "শেখ মুজিব প্রতিষ্ঠিত শিক্ষাহীন নেতা, গণতন্ত্রে অশিক্ষিত, মূর্খ এবং শিক্ষাহীন নেতা মাতাল ড্রাইভারের মতো।" একই বছর মুজিব আরও একটি ভয়ংকর কাজ করেন। ১৯৭২ সালে ৮ ফেব্রুয়ারি "জাতীয় রক্ষীবাহিনী আইন" পাসের মাধ্যমে সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বী বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে আরেকটি বাহিনী গড়ে তুলেন, যার নজির ইতিহাসে বিরল। রক্ষী বাহিনীর কাজই ছিল ভারত বিরোধী, শেখ মুজিব বিরোধী দল ও মতকে বর্বরোচিত কায়দায় দমন করা। গণতন্ত্রের সবক দিয়ে দেশ স্বাধীন করা শেখ মুজিব এভাবেই গণতন্ত্রের কবর খুঁড়ে রেখেছিলেন। বিরোধী দল ও মতের ওপর নির্মমতা ও সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রথম কাজ করেন শেখ মুজিব। 


দেখুন সে ইতিহাসের আয়না:

~ বই

~ ডকুমেন্টারি


খুন, গুম ও দুর্নীতির সূচনা


মুজিবের বর্বরোচিত শাসনে অতিষ্ঠ হয়ে সকল মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ জনতা একত্র হয়ে গঠন করে "জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল" (জাসদ)। ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠা এই দলকে দমনের জন্য শেখ মুজিব নৃশংস সকল পথই অবলম্বন করেন। রক্ষী বাহিনী দিয়ে জাসদের ৩০ হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করেন, ১০ হাজার নেতাকর্মীকে জেলে ও গুম করেন। রাস্তাঘাটে হাইজ্যাক, ব্যাংক লুট, গুন্ডামি-মাস্তানিতে স্বাধীন বাংলাদেশে ভয়ংকর এক আতঙ্কের নাম ছিল মুজিবপুত্র শেখ কামাল। মাঠে-ময়দানে মুজিব দুর্নীতির বিরুদ্ধে বড় বড় কথা বললেও তলে তলে সমর্থন দিতেন, ফলে শেখ কামাল হয়ে ওঠেন এক অপ্রতিরোধ্য দুর্নীতির বরপুত্র। ডাকসুর নির্বাচনে মুজিবপুত্র শেখ কামাল ব্যালট বাক্স চুরি করে নেন, প্রতিপক্ষরা মিছিল নিয়ে বেরিয়ে এলে কামাল তাঁদের দিকে গুলি ছোড়েন। ১৯৭৩ সনে ভোলার আসনে শেখ মুজিবের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ডাঃ আজহারউদ্দীনকে গুম করে মুজিব বাহিনী, একই দিন তৎকালীন জনপ্রিয় পত্রিকা গণকণ্ঠের সম্পাদক আফতাবউদ্দিন আহমেদকে গুম করেন মুজিব বাহিনী। তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো কথা বলবে না এই শর্তে পরবর্তীতে তাকে মুক্তি দেয়া হয়। সর্বহারা পার্টির সভাপতি শিরাজ সিকদারকে প্রথমে গুম, অতঃপর খুনের মাধ্যমে শেখ মুজিব স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম খুন ও গুমের সূচনা করেন। মুজিব পরিবার ইতিহাসের শুরুতেই কোনো অন্যায়-অবিচার বাদ রাখেননি।


এই বিষয়ে আরো জানতে:

~ বই

~ পত্রিকা


১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ ও শাসন পরিস্থিতি


১৯৭৪ সালের ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে এক কালো অধ্যায় হিসেবে পরিচিত, ছিল এক মানবিক বিপর্যয়। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন প্রতিষ্ঠানগুলোর তথ্য অনুযায়ী, ওই সময়ে প্রায় ১০ লাখ মানুষ খাদ্যের অভাবে মারা যায়। এই দুর্ভিক্ষটি আসলে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে হয়নি, বরং তা ছিল অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অপশাসনের ফলাফল। 


নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন তাঁর একটি কেস স্টাডিতে প্রমাণ করেছিলেন যে, ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশের ফসলের উৎপাদন অন্যান্য বছরের তুলনায় বেশি ছিল। কিন্তু ভারতের সঙ্গে পাচার এবং আওয়ামী লীগের নেতাদের দুর্নীতি, লুটপাট, এবং মওজুদারীর কারণে খাদ্যের অভাব দেখা দেয়, যা পরিণত হয় দুর্ভিক্ষে।


পথেঘাটে মৃত মানুষের লাশ পড়ে থাকতো, আর চিল-শকুন তাদের মাংস খাচ্ছিল। বাসন্তীর জাল পরিহিত একজন নারীর ছবিটি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে সমাজের সেই ভয়াবহতার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। 


সেই সময়, একটি বিদেশী সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে শেখ মুজিব ২৭,০০০ মানুষ মারা গেছে বলে উল্লেখ করেন, যা ছিল এক ধরনের তাচ্ছিল্যপূর্ণ মন্তব্য।


প্রখ্যাত কবি রফিক আজাদ এই সময়ে তাঁর কবিতায় ক্ষুধার্ত মানুষের অসহায়তা তুলে ধরে শেখ মুজিবকে “হারামজাদা” বলে সম্বোধন করেন। এই সাহসী কাব্যের কারণে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।


বাকশাল: গণতন্ত্রের মৃত্যু


শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৫ সালে বাকশাল গঠন করে বাংলাদেশে একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন করেন, যা দেশের গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার মৃত্যু ডেকে আনে। আওয়ামী লীগের অনেক নেতাও এই একদলীয় শাসনব্যবস্থার সাথে একমত হতে পারেননি। 


১৯৭৫ সালের ২১ জানুয়ারি সংসদ অধিবেশনে শেখ মুজিব বাকশাল সমর্থনের জন্য হাত তুলতে বলেন, কিন্তু মিজানুর রহমান চৌধুরী প্রতিবাদস্বরূপ বক্তব্য দিতে দাঁড়ালে শেখ মুজিব তাকে বসিয়ে দেন এবং গ্রেফতারের আদেশ দেন। এরপর তিনি একদলীয় শাসনের মাধ্যমে বাকশাল কায়েম করেন।


শেখ মুজিবের অত্যাচারী শাসন এবং গণতন্ত্রকে ধ্বংসের পরিণতিতে তাজউদ্দীন আহমদ মন্ত্রীসভা থেকে পদত্যাগ করেন। তাঁর ভবিষ্যদ্বাণী ছিল যে, এই স্বৈরাচারী শাসন শেষ পর্যন্ত দেশের ক্ষতি করবে এবং দেশ রাজাকারদের হাতে চলে যাবে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শেখ মুজিব ও তাঁর পরিবার নিহত হন, যার মাধ্যমে একদলীয় শাসন এবং তাঁর শাসনামলের সমাপ্তি ঘটে।


ইতিহাসের বিকৃতি


আওয়ামী লীগ ১৯৭১ পূর্ববর্তী কিছু ভাসা ভাসা দলিলের মাধ্যমে শেখ মুজিবকে জাতির জনক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সালের শাসনকাল গায়েব করে দেওয়া হয়েছিল। সেই শাসনামলে শেখ মুজিব যা করেছিলেন, তা ছিল একটি জাতিকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র।



No comments

Powered by Blogger.